এশিয়া কাপের সুপার ফোরে দুবাই আজ তেমনই অগ্নিগর্ভের মুখ হয়ে আছে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ ঘিরে। হয়তো সালমানের মতো হ্যান্ডশেক না করার সম্পর্ক নেই লিটনের সঙ্গে সূর্যকুমারের, তবে বর্তমান বাস্তবতায় বুকে আলিঙ্গন করার সম্পর্কও বোধ হয় নেই। ধারেভারে– সবকিছুতেই প্রতিপক্ষ এগিয়ে। র্যাঙ্কিংয়ে তারা যখন ১ নম্বরে, বাংলাদেশ তখন ৯।
এবারের আসরে এখন পর্যন্ত অপরাজেয় সূর্যকুমার জাদবরা। টি২০ ফরম্যাটের বিশ্বচ্যাম্পিয়নও তারা। গত দুই বছরে ৩২ টি২০ ম্যাচের মধ্যে শুভমান গিলরা হেরেছেন মাত্র তিনটিতে। দুই দলের ১৭ ম্যাচের মুখোমুখিতে বাংলাদেশের জয় একটিতে। রেকর্ডের এসব পৃষ্ঠা উল্টিয়েও বলা যায়, পদ্মা-গঙ্গার ক্রিকেট লড়াইয়ে স্নায়ুর চাপ উপেক্ষা করতে পারেন না কেউই। এই স্নায়ু জয় করতে পারলেই ফাইনালের পথে এক পা দিয়ে রাখতে পারবেন লিটনরা। হোঁচট খেলেও কপাল চাপড়ানোর কিছু নেই। কেন না কাল একই মাঠে প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। সেখানে শাহিন শাহ আফ্রিদিদের হারাতে পারলেও ফাইনালের সম্ভাবনা থাকবে। সব মিলিয়ে দুই দিনে দুই ‘বিগ ফিশ’ শিকারে নামা টাইগারদের যথেষ্ট রাগী ও তেজি থাকতেই হবে। দুবাইয়ের পড়ন্ত বিকেলের গরমে অনুশীলন করে যা খোয়াতে চাইছে না টিম ম্যানেজমেন্ট।
এমনিতেই সোমবার আইসিসির প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডে অনুশীলন করতে গিয়ে পাঁজরের পেশিতে টান পরে লিটনের। তবে দলের ফিজিও বায়েজিদ উল ইসলাম জানিয়েছেন, আপাতত ঠিক আছেন অধিনায়ক। ম্যাচের দিন তাঁর একাদশে থাকা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই টিম ম্যানেজমেন্টের। নেট প্র্যাকটিসের চেয়ে তাঁর এখন কয়েন নিয়ে টিম হোটেলে টস অনুশীলন করাই শ্রেয়! কেননা দুবাইয়ের বাইশ গজ গত দুই ম্যাচেই বলে দিয়েছে, পরে ব্যাটিং করলে যে কোনো রান তাড়া করা যায়। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশ যেমন ১৬৮ তাড়া করে জিতেছে, তেমনি পাকিস্তানের দেওয়া ১৭২ রানের লক্ষ্য অনায়াসে টপকে গেছে ভারত। ঠিক এই ম্যাচেই ভারতীয় দুই ওপেনার অভিষেক শর্মা ১৮৯.৭৪ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেছেন; শুভমান গিল ১৬৭.৮৫ স্ট্রাইকরেটে ছুটেছেন। তাদের মিডল অর্ডারের তিলক ভার্মা আর সঞ্জু স্যামসনও রয়েছেন আইপিএলের ফর্মে। হার্দিক পান্ডিয়া, অক্ষর প্যাটেল, শিভম দুবে আর কুলদীপ যাদব– অলরাউন্ডের এই লম্বা তালিকা দলের ব্যাটিং গভীরতা বাড়িয়েছে।
এই আসরে ভারত যে দাপটের সঙ্গে ম্যাচ খেলছে, তাতে অনেক সমর্থকই মনে করেন, তাদের হারানো সম্ভব নয়! আপনি কি মনে করেন, ভারতকে হারানোর সক্ষমতা আছে বাংলাদেশের?
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের কোচ ফিল সিমন্সের কাছে প্রশ্ন ছিল এক ভারতীয় সাংবাদিকের। উত্তরে রাশভারী সিমন্স। ‘প্রতিটি দলেরই ভারতকে হারানোর সক্ষমতা আছে। আমরা চেষ্টা করব নিজেদের সেরাটা খেলতে, সেই সঙ্গে ভারতের ভুলগুলোও কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।’ সিমন্সের ইঙ্গিত পরিষ্কার, ব্যাটিংয়ে নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে শ্রীলঙ্কা ম্যাচের মতো ভালো কিছু সম্ভব। বোলিংয়েও সেরাটা দিতে হবে, সেই সঙ্গে জোর দিতে হবে ফিল্ডিংয়ে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে এই মাঠে তিনটি ক্যাচ মিস করেছেন তাওহীদ হৃদয় ও শামীম হোসেন। রান গলেছে মুস্তাফিজ-শরীফুলের গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়েও। ভারতকে হারাতে হলে এই জায়গাগুলোতে নিখুঁত হতে হবে।
গতকাল সন্ধ্যায় দুবাইয়ে অনুশীলন করতে আসা ভারতীয় দলে মনে হয় না আজ একাদশে কোনো পরিবর্তন আসবে। পাকিস্তান ম্যাচের মতোই বুমরাহ, হার্দিকের সঙ্গে শিভম দুবে পেস বোলিং সামলাবেন। স্পিনে কুলদীপ যাদব, অক্ষর প্যাটেলের সঙ্গে বরুণ চক্রবর্তীকেও দেখা যাবে।
তবে দুবাইয়ের স্লো পিচে বাংলাদেশ দলে একটি বদল নিয়ে কানাঘুষা রয়েছে। শরীফুলের বদলে ভারতীয় ব্যাটারদের চোখে চোখ রেখে বোলিং করার জন্য পেসার তানজিম হাসান সাকিবকে দেখা যেতে পারে। ওপেনিংয়ে তানজিদের সঙ্গে থাকবেন সাইফ, তিনে লিটন, চারে তাওহীদ হয়ে শামীম আর জাকের। এ পর্যন্ত সব ঠিকই আছে। তবে লিটন যেহেতু বড় দলের বিপক্ষে প্রথার বাইরে গিয়ে মাঝেমধ্যে কৌশল ঠিক করতে ভালোবাসেন, সেখানে একজন অলরাউন্ডারের বদলে সাইফুদ্দিনকে দেখা গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আসলে অবাক কিছুর জন্যই আজ অপেক্ষা করে আছে পুরো বাংলাদেশ