আপলোড সময় : ০৪-১০-২০২৫ ১১:৩১:৩৪ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০৪-১০-২০২৫ ১১:৩১:৩৪ অপরাহ্ন

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিককে শেষ বিদায়


রোদ্রাত বিষণ্ণ সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেষবারের মতো এলেন ভাষাসংগ্রামী, কবি, প্রাবন্ধিক ও রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ আহমদ রফিক। শনিবার সকাল ১১টার দিকে তাঁর মরদেহ সেখানে নেওয়া হলে সর্বস্ত রের মানুষ, সংগঠন ও শুভানুধ্যায়ীরা আসেন প্রিয় প্রিয় মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।

শহীদ মিনারের বেদিমূলে ফুলে ফুলে ঢেকে যায় তাঁর কফিন। ভাষা, সাহিত্য আর মানবতার এই আজীবন যোদ্ধার প্রতি ভালোবাসার অর্ঘ্যে। । 

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে একটি শোকযাত্রার মধ্য দিয়ে মরদেহ নেওয়া হয় রাজধানীর সেগুনবাগিচার বারডেম হাসপাতালে। সেখানে ভক্ত, অনুরাগী ও সহযোদ্ধারা শেষবারের মতো তাঁকে ঘিরে দাঁড়ান। এরপর তাঁর মরদেহ হস্তান্তর করা হয় বারডেম হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগে। যেখানে তাঁর শেষ ইচ্ছানুযায়ী শরীরটি দান করা হবে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ ও গবেষণার বাজে মরদেহ দান করে জীবনের শেষ অধ্যায়েও সমাজ ও জ্ঞানের প্রতি দায়িত্ববোধের এক অনন্য নজির স্থাপন করলেন আহমদ রফিক।

'ভাষা থেকে মানুষ- তিনি ছিলেন সমাজরূপান্তরের সাধক' শ্রদ্ধা জানাতে এসে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, 'তিনি সমাজ রূপান্তরের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছিলেন। ভাষা সংগ্রামী হিসেবে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। কবিতা ও গবেষণাসহ বহুমুখী কাজ করেছেন। রবীন্দ্রনাথের ওপর তাঁর গবেষণা আমাদের সাংস্কৃতিক পরিসরকে সমৃদ্ধ করেছে।'

গবেষক মফিদুল হক বলেন, 'তিনি আজীবন ন্যায়ের পক্ষে থেকেছেন, মানুষের মুক্তির জন্য লড়েছেন। দেশভাগ তাঁকে ব্যথিত করেছিল, তাই আজন্ম সম্প্রীতির সমাজ গড়ার সাধনা করে গেছেন। রবীন্দ্রনাথ নিয়ে তাঁর কাজ রবীন্দ্রচর্চায় অনন্য মায়া দিয়েছে।

' বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, খুব কম মানুষই জীবনের শেষ পর্যন্ত আদর্শকে বহন করে চলেন। আহমদ রফিক ছিলেন সেই বিরল মানুষদের একজন। নিষ্ঠাবান লেখক, গবেষক এবং চিন্তাশীল নাগরিক হিসেবে তিনি আমাদের কাছে অনন্য। সম্পত্তি দান করে তিনি মানবতার এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

আলোকচিত্রশিল্পী নাসির আলী মামুনকে দেখা যায়, শেষবারের মতো আহমদ রফিকের ছবি তুলতে। ছবি তোলার মাঝেই তিনি বলেন, কিছুদিন আগেই তাঁর জন্মদিন গেল। নিঃসঙ্গ জীবন কাটিয়েছেন। শুনেছি, তাঁর চিকিৎসার টাকাও ছিল না। সরকারের মুখাপেক্ষী না হয়ে আমাদেরই শিল্প-সাহিত্যের মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত।

সংস্কৃতিকর্মী খুশী কবির বলেন, চলে যাওয়াটা আমাদের জন্য এক বিশাল শূন্যতা। ভাষা আন্দোলনের সময় থেকে তাঁকে সবাই চিনতেন। তাঁর লেখা, তাঁর ব্যক্তিত্ব, সব মিলিয়ে তিনি ছিলেন আলাদা এক মানুষ। আমি ভাগ্যবান যে তাঁর সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছি।

আহমদ রফিক ফাউন্ডেশনের সভাপতি মুনীর সিরাজ বলেন, তাঁর জীবন ছিল নিঃসঙ্গ, বিন্তু সৃষ্টিতে তিনি অফুরন্ত। রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দসহ নানা বিষয়ে তাঁর লেখা এক বিশাল ভাণ্ডার। পরিবারের সদস্য রেহেনা আক্তার বর্ণা বলেন, আমরা কাছ থেকে তাঁর সংগ্রামটা দেখেছি। আজ চাচাকে শ্রদ্ধা জানাতে এত মানুষ এসেছে, এটা আমাদের জন্য গভীর সান্ত্বনা। ভাগ্নে হুমায়ুন কবিরের আহ্বান, আমাদের দায়িত্ব তার কাজগুলো সংরক্ষণ ও প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া।

অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী বলেন, তিনি ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে বিশ্বাস করতেন - না। যা কিছু ছিল, সবই সমাজকে দান করে গেছেন। আমরা আজ যে শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, সেই মিনারের প্রথম নির্মাতাদের একজন ছিলেন তিনিই। আহমদ রফিক ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি ইসমাইল সাদী জানান, ২০১৮ সালে আহমদ রফিক ফাউন্ডেশন গঠিত হয় তাঁর সম্মতিতেই। তাঁর সাহিত্য, গবেষণা ও মানবিক আদর্শ সংরক্ষণেই আমাদের এই প্রচেষ্টা।

শ্রদ্ধার মিছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে

সকাল থেকে ভিড় করেন সাধারণ মানুষ, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ছায়ানট, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, মহিলা পরিষদ, নতুন দিগন্ত, সমাজ চিন্তা ফোরাম, শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট, বাম গণতান্ত্রিক জোট, বাসদ (মার্ক্সবাদী), - লেখক শিবির, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, খেলাঘর আসর, শিল্পকলা একাডেমি, - বাংলা একাডেমি, জাতীয় গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাসদ, ঐক্য ন্যাপ, ওয়ার্কার্স পার্টি, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, খামখেয়ালী সভা, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক কমিটি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ভাসানী জনশক্তি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলসহ অসংখ্য সংগঠন।
সম্পাদক : বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক তৈয়বুর রহমান, নির্বাহী সম্পাদক : আরিফ হোসেন, বার্তা সম্পাদক : মোশারফ হোসেন, উপদেষ্টা : ফাতেমা বেগম
ই-মেইল: 24sonalirajshahi@gmail.com, ওয়েবসাইট : www.sonalirajshahi.com, বার্তা বাহক নম্বর: 01715801785, 01766227626, 01784336244, 01712414708